পৃষ্ঠাসমূহ

To download contents, please click on the related pages listed above (e.g: The Qur'an, History etc)

Wednesday, September 28, 2011

ডা. জাকির নায়েক ও মাওলানা মওদুদীর সমালোচনা। পরিণতি কী?

ইদানিং ব্লগ সহ ইন্টারনেট দুনিয়া, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলে  মাওলানা মওদুদী ও ডা. জাকির নায়েককে নিয়ে প্রচুর লেখালেখি ও আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কড়া সমালোচনা করছেন। অন্যরা সেগুলোর জবাব দিচ্ছেন। এ কারণে  মুসলিম ভাইদের নিজেদের মধ্যেই উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা নিজেরাই বিভক্ত হয়ে পড়ছি। আর এসব বিতর্কের বেশিরভাগই হয়ে থাকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে যেগুলো নফল বা মুস্তাহাব ইত্যাদি।

সমালোচনাকারীরা দুই ধরণের। একদল সমালোচনা করেন না বুঝে। অপরদল করেন বুঝে শুনে ইচ্ছে করে তাঁদেরকে হেয় করার জন্য। এসব নিয়ে আমরা যখন অন্তর্দ্বন্ধে জড়াই তখন নিশ্চয়ই শয়তান আড়ালে বসে হাততালি দেয়।

মওদুদী ও ডা. জাকির নায়েক ইসলামের বড় আলেম ও ইসলামের জন্য তাঁদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু কোন মানুষই ভুলের উর্ধে নয়। তাই তাঁরাও অনেক সময় ছোটখাট ভুল করেছেন। আবার অনেক সময় আমাদের অজ্ঞতাবশত আমরা তাদের কথাকে ভুল মনে করেছি, ছোট ভুলকে বড় ভেবেছি বা প্রেক্ষাপট না জানাতে তাদেরকে ভুল ভেবেছি।

কিন্তু তাঁদের একচেটিয়া সমালোচনার পরিণতি কী? পরিণতি হচ্ছে যারা তিাদেরকে চেনেননা তারা এ সমালোচনার কারণে তাদেরকে খারাপ মনে করে বসে থাকবেন। ফলে দেখা যাবে এরা তাঁদের যেকোন মন্তব্যের বিরোধিতা করবে। যেমন তাঁরা হয়তো বলবেন, ইসলাম নারীকে সম অধিকার দেয়। কিন্তু এরা( যারা অপপ্রচারের কারণে ভুল ধারণা পোষণ করছেন) তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণের কারণে এ কথারও বিরোধীতা করে ইসলামের ক্ষতি ও অপপ্রচার করে বসবেন।

কয়েকদিন আগে এক ব্লগার মাওলানা মওদুদীর বিরোধীতা করতে গিয়ে বললেন-মওদুদী তাফহীমুল কুরআনে বলেছেন-
”এখানে আরেকটি প্রশ্ন দেখা দেয়, সেটি হচ্ছে. হযরত ইব্রাহীম আ. যখন তারকা দেখে বললেন, এ আমার রব আবার চাঁদ ও সূর্য দেখে তাদেরকেও নিজের রব বলে ঘোষণা দেন, সে সময় কি তিনি সাময়িক ভাবে হলেও শিরকে লিপ্ত হননি?”
তিনি বোঝালেন মওদুদী হযরত ইব্রাহীম আ. কে মুশরিক বলেছেন(নাউযুবিল্লাহ)। অথচ মওদুদী এখানে বোঝতে চেয়েছেন সন্দেহবাদী ও কুরআন বিদ্বেষীদের মনে এ প্রশ্ন আসতে পারে।তিনি পরবর্তী লাইন সমূহে এ অভিযোগের নিরসন ঘটিয়েছেন। (সুরা আন’আম ৬: আয়াত ৭৯, টীকা ৫৩)
অর্থ্যাৎ ব্লগার ইচ্ছা করে তাঁর কুৎসা করতে চেয়েছেন।
এরকম উদাহরণের অভাব নেই।
জাকির নায়েক সম্পর্কেও একইভাবে ভুল ব্যাখ্যা চলছে। বিশেষ করে ফিকহ ও মাসায়িল সম্পর্কে। যেমন তারবীর সালাত কত রাকাত, জামায়াতে নামাজ পড়ার সময় সুরা ফাতেহার পর মুক্তাদীদের উচ্চস্বরে আমীন বলা ইত্যাদি।
এখানে উল্লেখ্য ফিকহের বিষয়ে মতানৈক্য থাকতেই পারে।উল্লিখিত বিষয়ের চেয়ে বড় বড় বিষয়ে ও প্রধান চার ইমামের মত ভিন্ন ভিন্ন। যেমন মাংস হারাম হালাল নিয়ে এমনকি সাহাবীরাও দ্বিধাবিভক্ত।
তাই বলে আমরা সাহাবীদেরকে(নাউযুবিল্লাহ) ও চার মাজহাবের ইমাম ও অন্যান্য আলেম দেরকে ফেতনাবাজ বলব? তাদের সমালোচনা করবো ?

এছড়াও সময়ের পরিবর্তনের সাথে মাসয়ালা বদলাতে পারে।
যেমন আগে ধূমপান হারাম ছিলনা। কিন্তু কুরআন বলছে -

وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ "তোমরা নিজেরা নিজেদেরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা"-(২:১৯৫)

এখন বিজ্ঞানে প্রমাণিত ধূমপান মৃত্যুর অন্যতম কারণ তাই ধূমপান হারাম। এটা অবশ্যই ঠিক।
তাই বলে আমরা পূর্বের মতধারী আলেমদের সমালোচনা করব?
না বরং বিভিন্ণ সময় ব্যাখ্যা পাল্টাতেই পারে। আসুন উদার মনের অধিকারী হই। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নিজেরা ঝগড়া না করি।
মুসলিমরা অনৈক্যে জর্জরিত বলেই তো তারা আজ মার খাচ্ছে। কয়েক লাখ ইসরাঈলীরা আমাদের বৈধ আধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। আমরা কিছুই করতে পারছিনা। হামাস -ফাতাহ মিলতে পারছেনা। কি কারণে ? -অনৈক্যের কারণে।
পৃথিবীতে আজ অশান্তি কেন?
কারণ আমরা মুসলিমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছিনা। দায়িত্বটা কী?

আল্লাহ বলছেন- (সুরা আলে ইমরান, ৩:১১০)

 كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۗ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
অর্থ-”এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য। তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷ এই আহলি কিতাবরা  ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো৷ যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান৷”

তাই আল্লাহ অন্য জাতি (যারা মানবতার শত্রু) দ্বারা আমাদের প্রতিস্হাপিত করে দিয়েছেন। যেমন ঘোষণা দিয়েছেন সুরা মুহাম্মাদে(৪৭: ৩৮) 

وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُم

অর্থ-”তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আল্লাহ তোমাদের স্থানে অন্য কোন জাতিকে নিয়ে আসবেন৷ তারা তোমাদের মত হবে না৷”

ঠিকই এটা ঘটে গেছে। এখন মানবজাতির প্রতিনিধি হয়ে আমেরিকার মত সাম্রাজ্যবাদী যারা মানবতার চরম শত্রূ।

আমরা স্পেনের কর্ডোভায় হেরেছি কেন?
কেন আমরা পিরেনিজ পাড়ি দিয়ে ফ্রান্সে যেতে পারিনি। (যেটা হলে আজকের ইউরোপ থাকত ইসলামের আলোয় আলোকিত -ফলে বিশ্বে থাকতনা সাম্রাজ্যবাদের হুঙ্কার)
এর কারণ হল নিজেরা তুচ্ছ বিষয়ে মতভেদে জড়িয়ে পড়া।
ইসলাম বিরাধীরা এ জন্যই বলে- মুসলিমদের হারাতে হলে তাদেরকে ঘরোয়া বিভেদে জড়িয়ে দাও, কেননা আদর্শের লড়াইয়ে তাদের হারানো অসম্ভব।
কি সেই আদর্শ? আদর্শ হলো কুরআন-সুন্নাহ যা আমাদেরকে বলে
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّـهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّ‌قُوا
 ”তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আকঁড়ে ধর ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইওনা” (সুরা ইমরান : ১০৩)
”খোদাভিতি ও নেকির কাজে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য কর।”

No comments:

Post a Comment

This site makes you